স্বদেশ ডেস্ক:
সরকারের সুদ পরিশোধ বাবদ খরচ দিন দিন বাড়ছে। গত সাত বছরের ব্যবধানে এ খাতে দ্বিগুণেরও বেশি ব্যয় বেড়েছে। বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ব্যাপক হারে ঋণ নেওয়ায় সরকারের সুদ ব্যয় প্রতিবছরই বেড়ে চলেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সুদ খাতেই সরকারকে ব্যয় করতে হবে ৬৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছর থেকে চার হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় ধরা রয়েছে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে সুদ খাতে অর্থব্যয় শেষ মুহূর্তে আরও কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানিয়েছে, ‘কোভিড ১৯-এর কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বর্ধিতহারে কিছু ঋণ সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এই ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য আরও দুশ-তিনশ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় ৬৯ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রতি অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের ৯০ শতাংশই বরাদ্দ থাকে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বাকিটা বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ, ব্যাংকের মেয়াদি ঋণের সুদ, সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিল বা জিপিএফের সুদ, চলতি ঋণ এবং জীবন বিমা ও অন্যান্য ঋণের সুদ পরিশোধের বিষয়গুলো রয়েছে। এছাড়া, করোনাকালে নতুন করে প্রণোদনা, ভ্যাকসিন কেনাসহ নানা খাতে সুদ ব্যয় হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সুদ ব্যয় হয় সঞ্চয়পত্র খাতে। এ খাতে সরকারকে ১১ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৪-১০৫ অর্থবছরে যেখানে বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। সেখানে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৬৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ সময় অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয়ও ৬ গুণের বেশি বেড়েছে। মূলত গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে অধিকহারে ঋণ নেওয়ার কারণে এই ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারকে ঋণ করে ব্যয় মেটাতে হয়। ফলে ঋণের সুদের হার দিন দিন বাড়ছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, গত পাঁচ বছরে এটি দ্রুত বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সুদ পরিশোধ বাবদ খরচ বাড়ছে। অতীতের ঋণের কারণে খরচ বাড়ছে। ব্যবস্থাপনায় সংস্কার দরকার। বাজারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের বেশি সুদে ঋণ নেওয়ায় এমনটি হয়েছে। এখানে সংস্কার আনতে হবে। তা না হলে বোঝা বাড়বেই। সুদ নির্ধারণ পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে।